মুসলিম শাসকরা কি ইহুদিদের দাসে পরিণত হয়েছেন?
১১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৮ এএম

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে একটি লোমহর্ষক ভিডিও। ঐ ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, গাজার উপর ইসরাইলের বোমা হামলার নৃশংস দৃশ্য। বোমা বিস্ফোরণের তীব্রতায় কিছু মানুষের দেহ আকাশে ছিটকে পড়ছে। আর ঔদ্ধত্যের সঙ্গে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘এটা কেবল শুরু।’
গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর মেয়াদ শেষ হয় ২ মার্চ। যুদ্ধবিরতির মূল চুক্তিতে বলা ছিল, প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি চলাকালে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা হবে। যদি এর মধ্যেও দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতির শর্ত নিয়ে সমঝোতা না হয়, তাহলে প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি চলবে। এ ছাড়া প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার পর ২ মার্চ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ সাময়িকভাবে বাড়ানোর বিষয়ে অনুমোদন দেয় ইসরাইল সরকার। পবিত্র রমজান ও ইহুদিদের পাসওভার উৎসব এই মেয়াদকালের আওতায় পড়েছে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ে। কিন্তু যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরাইল আবারও গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে।
১৮ মার্চ মঙ্গলবার ঘড়িতে তখন রাত ২টা ১০ মিনিট। মেয়ে বানিয়াসকে নিয়ে গভীর ঘুমে গাজার অধিবাসী মারাম হুমাইদ দম্পতি। আচমকা যুদ্ধবিমান থেকে একের পর এক বোমা হামলার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় বানিয়াসের। শিশুটির চোখেমুখে তখন আতঙ্ক। চিৎকার করে কাঁদছিল আর বাবা-মাকে জিজ্ঞাসা করছিল, ‘বাবা! মা! কী হচ্ছে বাইরে?’
মারাম হুমাইদ বলেন, ‘মেয়ে শুয়ে ছিল আমার পাশে। তাকে কী বলবো বুঝতে পারছিলাম না। এ অবস্থায় মেয়েকে আমি কোলে জড়িয়ে রাখি। হামলার তীব্রতা আরও বাড়তে থাকে। বুঝতে পারছিলাম আবার ইসরাইল হামলা শুরু করেছে।’
চারপাশে ইসরাইলের নির্বিচার বোমা হামলার শব্দে ঘুম ভাঙে গাজার স্কুল শিক্ষক আহমেদ আবু রিজক ও তাঁর পরিবারের। তিনি বলেন, ‘আমরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। শিশুরাও ভয়ে কুঁকড়ে গিয়েছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিভিন্ন সড়ক থেকে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স আসতে শুরু করে। দেখলাম লোকজন তাঁদের হাতে করে সন্তানদের ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ নিয়ে আশপাশের হাসপাতালের দিকে ছুটে যাচ্ছে।’
মোমেন কোরেইকেহ নামে গাজার আর এক বাসিন্দা বলেন, সোমবার মধ্যরাতে ইসরাইলের এই হামলায় নবজাতক, নারী-শিশুসহ পরিবারের ২৬ জন সদস্যকে হারিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন গণমাধ্যম মারফাত গাজায় চলমান এ তথ্যগুলো ইতিমধ্যেই বিশ্ববাসীর দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
গাজায় কর্মরত আল-জাজিরার প্রতিনিধি তারেক আবু আজৌম জানান, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, অস্থায়ী হাসপাতাল, আবাসিক ভবন-সর্বত্র বিমান থেকে বোমা হামলা অব্যাহত রয়েছে। হামলায় হামাসের কিছু শীর্ষ নেতাও নিহত হয়েছেন। যুদ্ধবিমান ও ড্রোন থেকে চালানো হামলায় নিহত হয়েছে অগনিত মানুষ। নবজাতক, শিশু, নারী ও প্রবীণ মানুষের অসাড় দেহ পড়ে রয়েছে যত্রতত্র। দাফন-কাফনেরও সুযোগ দিচ্ছে না অভিশপ্ত ইসরাইলি বাহিনী। বনি আদমের অনেক লাশ কুকুরের খাদ্যে পরিণত হয়েছে। গত দেড় বছরে ইসরাইলের অমানবিক নৃশংসতা গাজাকে এক মৃত্যকূপে পরিণত করেছে। গাজার নৃশংসতার কাছে পৃথিবীর সকল নৃশংসতা হার মেনেছে। এক ভয়াবহ অমানবিক দৃশ্যের নাম হলো গাজার রাফাহ নগর, যা মিশরের সীমান্তে অবস্থিত। এ নগরির বর্তমান অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে গাজার বাসিন্দা সালেহ আল জাফরী মুসলিম বিশ্বের উদ্দেশ্যে ফেসবুকে এক চিঠি লিখেছেন। তাতে তিনি বলেছেন: ‘মিশর সীমান্তে গাজার ছোট্ট নগর রাফাহ। ওরা গাজার সকল স্থাপনা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে অনেক আগেই। প্রাণ বাঁচাতে রাফাহতে অবস্থান করছিল বেঁচে থাকা অসহায় ফিলিস্তিনিরা। কিন্তু সেই রাফাহ আর অবশিষ্ট নেই। ইসরাইল পুরোপুরি নিঃশ্বেস করে দিয়েছে রাফাহকেও! আর অল্প সময়ের মধ্যে গাজা নিঃশব্দে মিলিয়ে যাচ্ছে দুনিয়ার মানচিত্র থেকে। একটি একটি করে আলো নিভে যাচ্ছে, একটি একটি করে নিঃশ্বাস থেমে যাচ্ছে। আমরা বাঁচার আর্তনাদ পাঠালেও পৃথিবীর কানে সে আর্তনাদ পৌঁছেনি। আপনারা আমাদের কেবল জান্নাতে খুঁজে পাবেন। বিদায়! হে ইতিহাসের সবচেয়ে নিষ্ঠুর উম্মত...।’ তিনি আরো লিখেছেন, আজকের ইতিহাস হয়তো কিছুই মনে রাখবে না। কিন্তু আকাশ-পাতাল লিখে রাখবে এই কান্না, এই নিরব ধ্বংসযজ্ঞ। ইতিহাসের পাতায় এ কথা লেখা থাকবে যে, পাকিস্তান ছিল বিশ্বের অন্যতম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। তবু গাজা রক্ষার্থে তারা এগিয়ে আাসেনি। ইসরাইলের বিরুদ্ধে পাকিস্তান টু শব্দটি পর্যন্ত করেনি।
মিশরের বুক চিরে বয়ে চলেছে নীলনদ। এটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহমান বিশাল এক স্রোতস্বীনীর নাম, যা প্রাণ জুগিয়েছে আফ্রিকার মরুভূমিকে। অথচ, পাশেই গাজার শিশুরা তৃষ্ণায়-পিপাসায় কাঁপতে কাঁপতে লুটিয়ে পড়ছে মাটিতে। তৃষ্ণার্ত শিশুদের এক ফোঁটা পানিও দেয়নি এ মিশর!
গোটা বিশ্বের মুসলমানদের আছে ৫০ লাখ সৈন্য, আছে ট্যাংক, ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান, স্যাটেলাইট, গোয়েন্দা বাহিনী, আধুনিক প্রযুক্তি এমনকি হাইড্রোজেন পরমাণু বোমাও। কিন্তু গাজার আকাশে একটার ছায়া পড়েনি। গাজার দিকে কেউ হাঁটেনি। গাজাকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেনি। সৌদি আরব আর আরব আমিরাতে রয়েছে তেলের খনি। অথচ, তেলের অভাবে গা’জার হসপিটাল ও অ্যাম্বুলেন্সগুলো অচল। আমাদের আগামীর প্রজন্ম জানবে, এই পৃথিবীতে ২০০ কোটি মুসলিম থাকার পরও কেউ ফিলিস্তিনের পক্ষে ছিলো না। তখন তারাই আমাদের কাপুরুষ হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত করবেন!
এটাই এখন প্রমাণিত যে, পৃথিবীতে একমাত্র মুসলিম দেশ হলো ফিলিস্তিন (গাজা) আর বাকি সবদেশ অমুসলিম! পৃথিবীতে মুসলমান আছে শুধুমাত্র ফিলিস্তিনের গাজায়! পৃথিবীর অন্য কোথাও মুসলমান নেই! মানব ইতিহাস এই ঘৃণ্য স্মৃতি কীভাবে সংরক্ষণ করবে?
তিনি আরো লেখেন, গাজায় ধ্বংস হওয়ার মতো আর কিছু বাকি নেই। এদের দেখে আমার কোনো আফসোস নেই। কারণ ওরা জান্নাত পেয়ে গেলো। তবে আফসোস হচ্ছে নিজের জন্য যে, আমরা বেহুদাই ইমাম মেহদী আসলে তার দলে যোগ দিবার আশায় কাপুরষ, নামমাত্র ব্যর্থ কলঙ্কিত মুসলমান হিসেবে বেঁচে রইলাম।
সবকিছু থাকবে ইতিহাসে। গাজার মতোই জ্বলছে কাশ্মীর, উইঘুর, রোহিঙ্গা, ভারত সিরিয়াসহ মুসলিম বিশ্বের অগনিত জনপদ। সব ইতিহাসই লেখা হবে। তবে সবচেয়ে করুণভাবে লেখা থাকবে এই কথা যে, মুসলিমরা চুপ ছিল। সবাই নিরব ছিল। মৃত্যুর চেয়েও গভীর ছিল সে নিরবতা।’
আর এই নিরবতা ভাংতেই হয়তো শেষ সময়ে এসে ইট পাথরে কথা বলবে।
গাজার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে আল জাজিরার এক প্রতিবেদন এখানে উল্লেখ করা হলো। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘গাজার প্রতিটি এলাকায় এখন নিয়মিতভাবে নিষিদ্ধ ফ্লোরিন বোমা ব্যবহার করা হচ্ছে! প্রতি ২০ সেকেন্ডে একটি করে মিসাইল ছোড়া হচ্ছে! ফলে পুরো অঞ্চলটি মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।’
আলজাজিরা, সিএনএন, এনবিসি-সহ সকল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকদের গাজা ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছে ইসরাইল। কোনো মিডিয়াকে সেখানে রিপোর্ট করতে দেওয়া হচ্ছে না। বাস্তবতা ঢেকে রাখা হচ্ছে বিশ্ববাসীর চোখ থেকে।
এখন গাজার মানুষের জন্য খাবার নয়, দরকার অক্সিজেন। বাতাসে বিষ- নিঃশ্বাসও এখন প্রাণঘাতী।
রাফাহ শহর সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন! খবর আসছে-সেখানে আর কেউ বেঁচে নেই। চারপাশে শুধু ছাই, ধ্বংস আর নিরবতা। জীবনের কোনো চিহ্ন নেই। পরিশেষে বলবো, আমেরিকা ও ইসরাইলের অত্যাচারে গাজা মুসলিমশূন্য হয়ে পড়লো। আর এর মাধ্যমে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতি সম্পন্ন করলো ট্রাম্প।
আমেরিকা, ইসরাইল ও ভারত- তিন ভাই একজোট হয়েই মুসলিম নিধনে নেমে পড়েছে। আর ৫৭টি মুসলিম দেশের রাজারা বেঁচে আছে তাদের তল্পীবাহক হিসেবে!
লেখক: অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ’ অবস্থায় দেশে ফেরায় আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও জাতীয় ইমাম সমিতি

প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন: সিলেট বাসদ

বালাকোট দিবসে সিলেট মহানগর ছাত্র শিবিরের আলোচনা সভা

সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী আলেমদের বিরুদ্ধে উগ্র নারীবাদীকে লেলিয়ে দিয়েছে: হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ

কেউ অপরাধ করলে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার- শাহীনুর কবির

এবার নতুন ভূমিকায় ফুটবলার বাবলু

ব্রাজিলের নতুন কোচ আগামী সপ্তাহেই

দেশে বছরে ৬ হাজারের বেশি শিশু থ্যালাসিমিয়া নিয়ে জন্ম গ্রহণ করছে, সচেতনতা বৃদ্ধির উপর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

কুলাউড়া বাবনিয়া- হাসিমপুর মাদরাসার অধ্যক্ষের উপর হামলা,আটক-১

রাবেয়া-ফাহিমার উন্নতি, অবনতি নিগার-শারমিন-ফারজানাদের

ফরিদপুরে ছিনিয়ে নিয়ে শিশু কন্যাকে বিক্রি করলেন বাবা, খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ

অসুস্থ মাকে দেখতে হাসপাতালে ডা. জুবাইদা

সুযোগ হাতছাড়া ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দলের

না জেনে অলাভজনক জমি মসজিদে দান করা প্রসঙ্গে?

শান্তির বার্তা দিয়ে হিন্দুত্ববাদীদের তোপের মুখে কাশ্মীর হামলায় নিহতের স্ত্রী

আর্সেনালের বিপক্ষে দেম্বেলেকে পাচ্ছে পিএসজি

'যুগান্তকারী' বাণিজ্য চুক্তি করছে ব্রিটেন ও ভারত

আত্মপ্রকাশ করেছে ‘জুলাই ঐক্য’ নামের নতুন জোট
কবে ফিরবেন তাসকিন

ভারতে প্রবেশের সময় মহেশপুর সীমান্তে ১৯ বাংলাদেশি আটক